unsungwinner-2019



সবুজ সাথী

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রথম নারী মহাপরিচালক ভাগ্য রাণী বণিক, যিনি দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৬ সাল থেকে। শের-ই-বাংলা এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি যোগদান করেন বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ও ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি থেকে লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রি। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সায়েন্টিফিক জার্নালে ছাপা হয়েছে সবুজ সাথী এই নারীর ৩৭টি রিসার্চ আর্টিকেল। জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্যের পর্যাপ্ততার উপর ভাগ্য রাণী বণিকের আছে উল্লেখযোগ্য রিসার্চ এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট পেয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক সাফল্য।

একজন অদম্য নারী

পা অচল হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অসুস্থ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা বন্ধ করেননি অদম্য নারী ইরানি বাড়ৈই। বর্তমানে তিনি মাদারীপুরের ১০০-শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন।

১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ডিপ্লোমা পাশ করে মাদারিপুর জেনারেল হাসপাতালে যোগ দেন ইরানি বাড়ৈই। ১৯৯৬ সালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার হাত ও পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। থেরাপির পর তাঁর হাতের অবস্থার উন্নতি হলেও পা আর ঠিক হয়নি।

হাসপাতালের রোগী, সিনিয়র এবং সহকর্মীদের মতে প্যারালাইসিস ইরানির কর্মে কোনোই প্রভাব ফেলতে পারেনি। তিনি বিশ্বাস করেন যতদিন তাঁর হাত সচল আছে, ততদিন তিনি রোগীদের সেবা চালিয়ে যেতে পারবেন।

প্রথম মহিলা পুলিশ অফিসার

বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পুলিশ অফিসার এবং অতিরিক্ত ইন্সপেকটর জেনারেল অফ পুলিশ ফাতেমা বেগম।

১৯৮৪ সালে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ প্রশাসনে যোগ দেওয়া দেশের প্রথম দুই নারীর একজন ফাতেমা বেগম।

"পুলিশ বাহিনী মহিলাদের জায়গা নয়, এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার কারণে আমাদের প্রথম দিন থেকেই বের করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়, যেটার শুরু ওরিয়েনটেশনের দিন নতুন অফিসারদের ঢুকতে না দিয়ে,” জানান ফাতেমা। অন্য জায়গায় পোস্টিং নেওয়ার জন্য ফাতেমাকে জোরপূর্বক হোম মিনিস্ট্রিতে দরখাস্ত করতে বাধ্য পর্যন্ত করা হয়। ট্রেনিং শেষে পুরুষ অফিসারদের সব গুছিয়ে পুলিশ একাডেমি যাওয়ার আদেশ দেওয়া হলেও ফাতেমার জন্যে কোন নির্দেশনাই ছিল না। অনেক অপেক্ষার পরেও তা আসেনি। কয়েকদিন পর তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে চিঠি লিখে জানান যে তিনি তাঁর চাকরি কোনভাবেই ছাড়বেন না, বরং আরো অপেক্ষা করবেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর জেদের কাছে হার মেনেই তাকে পুলিশ একাডেমি যাওয়ার অনুমতি দেওয়ায় হয়।

অন্ধত্ব কোনো বাধাই নয়

মাত্র ৩ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারান রোকেয়া বেগম। কিন্তু অন্ধ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি এখন তাম্বুলখানা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। সাধারণ একজন শিক্ষকের মতই পড়ান তিনি এবং সবার মাঝেই বেশ জনপ্রিয় রোকেয়া বেগম।

এই অবস্থানে আসতে রোকেয়া বেগমের করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম। তাঁর বাবা শেখ মুজিবর রহমান পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে পরলোক গমন করেন এবং তার কয়েক বছর ইন্তেকাল করেন মা। এরপর তাঁদের দায়িত্ব এসে পরে বড় বোন শাহানাজের কাঁধে।

রোকেয়ার অন্য তিন বোনও অন্ধ, যার মধ্যে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ২৯ বছর বয়সী শিখা বেগম পড়ছেন ইডেন মহিলা কলেজের সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগে এবং ২২ বছর বয়সী আশিয়া আক্তার পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ইতিহাস বিভাগে।

"তিনি খুব ভাল শিক্ষিকা হওয়ার পাশাপাশি একজন ভাল মানুষও,” জানান তাম্বুলখানা প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টার কাকলি সাহা। “রোকেয়া শুধু অদম্যই নয়, বরং যথেষ্ট মেধাবীও বটে।"

একজন নিঃস্বার্থ ধাত্রী

মানিকগঞ্জে চৌবাড়িয়ার সোনাজন আক্তার বিগত ৫০ বছর ধরে তাঁর গ্রামসহ অন্তত আরো ১৫টি গ্রামে ধাত্রী হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ৬৮ বয়সী এই নারী দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও এই কাজের জন্যে কোন পারিশ্রমিকই গ্রহণ করেন না। শুধু জন্মের সময় মায়ের সেবা করাই নয়, নিঃস্বার্থ এই নারী জন্মের ১০ দিন পর পর্যন্ত নবজাতকদের সেবা করে থাকেন একজন আপন দাদীর মতোই, যা পরিচিত মানুষজন এবং আত্মীয়স্বজনরা সকলেই স্বীকার করেন একবাক্যে।

জয়পুরহাটের আলোর দিশারী

দুই বছর আগে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার তিনটি গ্রামে মেফতাহুল জান্নাত লিখন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্থাপন করেন কিছু সৌর প্যানেল, যার ফলস্বরূপ এখন দরিদ্র পরিবারের শিশুরাও পড়াশোনা করতে পারছে রাতে।

সৌর প্যানেলের দাম অনেক হওয়ার কারণে অনেকেই সৌর প্যানেল বিক্রয় কেন্দ্র থেকে খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হতেন। এসব দেখে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের সমস্যা ভাবিয়ে তুলতে শুরু করে লিখনকে। সব শিশুরই আছে স্কুলে পড়ার ন্যায্য অধিকার এবং রাতে পড়ার জন্য আলো থাকলে বৃদ্ধি পাবে তাঁদের মনোবল – এই চিন্তায় ডুবে থাকতেন লিখন।

সেই তিনটি গ্রাম এখন একত্রে “সোলারগ্রাম” নামে পরিচিত এবং ১৪৮টি পরিবারের কাছে সৌর আলো পৌঁছে গেছে লিখনের উদ্যোগের কল্যাণে।

কিন্তু কেবল আলোই যথেষ্ট নয়, পড়াশোনার জন্য প্রয়োজন বইও। আর তাই এ বছরের মার্চে লিখন সোলারগ্রামে বিনামূল্যে বিতরণ করেন বই। আর এসবই লিখনকে করে তুলেছে আলোর দিশারী নামটির যোগ্য দাবীদার।

বাংলার মালালা

বাল্যবিবাহ রোধে প্রশংসনীয় কাজের জন্য নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ শাহিদা আক্তার স্বর্ণাকে “বাংলার মালালা”র খেতাবে ভূষিত করেন।

গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের মতো স্বর্ণাও অল্প বয়সে বিয়ের জন্য অনেক চাপের মুখোমুখি হন। তাঁর অন্য বোনগুলো বিনা আপত্তিতে বিয়ের পিঁড়িতে বসে গেলেও স্বর্ণা রাজি হননি, কারণ তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার ছিল পড়াশোনা শেষ করা।

মেয়েদের জন্য স্বর্ণার অভাবনীয় সব উদ্যোগই তাঁকে নিয়ে এসেছে মালালা ইউসুফযাই-এর কাতারে। মালালার মতো জীবনের ভয় নিয়ে কাজ করতে না হলেও স্বর্ণার কাজ কোন অংশেই সহজ ছিল না।

গাজীপুরের মাওনা ইউনিয়নে প্ল্যান বাংলাদেশের শিশু ফোরামের সভাপতি স্বর্ণা এখন তাঁর গ্রামে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরব ভূমিকা পালন করছেন এবং এখন পর্যন্ত ৬টি বাল্যবিবাহ থামিয়েছেন।

নেতৃত্ব গুণের অধিকারী স্বর্ণা সবসময়ই নিজ দায়িত্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা করেন ছাত্র-ছাত্রীদের। একসময় ডাক্তার হতে চাওয়া স্বর্ণার এখন ইচ্ছা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে সমাজ গড়ে তোলার পেছনে কাজ করার।